অপশন ট্রেডিং আসল নাকি ভুয়া? নতুনদের জন্য খোলাসা সত্য
আপনারা যারা শেয়ার বাজারে কাজ করেন বা কখনো অনুসরণ করেছেন, নিশ্চয়ই অপশন ট্রেডিংয়ের নাম শুনেছেন। অনেক সময় নিজের মনে প্রশ্ন জাগে-“আমি কেন আসলে অপশন ট্রেডিং করার কথা ভাবলাম?” এর মূল কারণ হলো বিজ্ঞাপন। মিডিয়ায় অপশন ট্রেডিংকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন খুব সহজেই এখান থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী জানেন?
এসব বিজ্ঞাপন শুধুই প্রলোভন। আপনাকে আকৃষ্ট করে ট্রেডিংয়ে নামাতে চায়। কারণ অপশন ট্রেডিং এমনভাবে তৈরি, যেখানে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাকেই টার্গেট করা হয়। আমি যতদিন ট্রেড করেছি, ততদিনে বুঝেছি-এটা পুরোপুরি একটা কন্ট্রোল সিস্টেম। আপনার নিজের ওপর যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে অপশন ট্রেডিং আপনার জন্য নয়।
এখানেই সাধারণ মানুষের সমস্যা। কয়েকদিন লাভ করলে মনে হয়, সিস্টেমটা সত্যিই কাজ করছে। কিন্তু পরে দেখা যায় সব টাকা বাজার কেড়ে নেয়। তাই প্রশ্ন আসে-এটা আসল নাকি ভুয়া?
অপশন ট্রেডিং আসলে কী?
সহজভাবে ধরুন, অপশন ট্রেডিং অনেকটা ইনস্যুরেন্সের মতো।
উদাহরণস্বরূপ:
আপনি ১০ লাখ টাকার ইনস্যুরেন্স করলেন। কিন্তু একসাথে ১০ লাখ দিলেন না, বরং বছরে ১ লাখ টাকা প্রিমিয়াম দিলেন। এর মানে হলো, আপনি আসলে একটা চুক্তি (Contract) করেছেন।
অপশন ট্রেডিংও এরকম। এখানে আপনি শেয়ার কেনেন না, বরং নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দামে কেনা বা বিক্রির অধিকার কিনে নেন।
Call Option: যখন আপনি মনে করেন বাজার বাড়বে।
Put Option: যখন মনে করেন বাজার পড়বে।
উদাহরণ:
Apple শেয়ারের দাম এখন ২০০ ডলার। আপনি ১ মাসের জন্য ২০০ ডলারে Call Option কিনলেন।
এক মাস পর যদি দাম বেড়ে ২৫০ হয় → আপনি ২০০ ডলারে কিনে লাভ করবেন।
দাম যদি উল্টো ১৮০ হয় → আপনার পুরো প্রিমিয়াম লস।
তাহলে কি এটা আসল, নাকি ভুয়া?
এটা ভুয়া প্রশ্ন। কারণ Option Trading কোনো জাল বিষয় নয়।
NASDAQ, NYSE, NSE, BSE—সব সরকারি অনুমোদিত এক্সচেঞ্জেই প্রতিদিন লাখো কোটি ডলারের অপশন ট্রেড হয়। তাই এটাকে ভুয়া বলার সুযোগ নেই।
তবে ভুয়া হলো সেই বিজ্ঞাপন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফেক স্ক্রিনশট, যেখানে বলা হয় “একদিনে ১ লাখ প্রফিট।”
কেন অনেকে এটাকে স্ক্যাম ভাবে?
ক্যাপিটাল দরকার: পর্যাপ্ত টাকা ছাড়া অপশন ট্রেডে টিকে থাকা যায় না।
ঝুঁকি বেশি: মুহূর্তেই বড় লাভ হতে পারে, আবার মুহূর্তেই সব হারাতে পারেন।
প্রতারক গ্রুপ: ফোনকল বা টেলিগ্রামে ফেক সিগন্যাল দিয়ে মানুষকে ঠকানো হয়।
তাহলে কি এখান থেকে আয় করা যায়?
হ্যাঁ, যায়। অনেক স্মার্ট ট্রেডার এখান থেকে নিয়মিত আয় করেন। পার্থক্য হলো—তারা শিখে নিয়েছেন কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হয়, খবর বুঝতে হয়, ফেক নিউজ এড়িয়ে চলতে হয়।
শেখার মূল বিষয়:
মার্কেট জ্ঞান: চার্ট পড়া, নিউজ বোঝা।
ঝুঁকি ম্যানেজমেন্ট: এক ট্রেডে সব ক্যাপিটাল ঢোকানো যাবে না।
স্ট্র্যাটেজি শেখা: Call/Put ছাড়াও Covered Call, Straddle, Iron Condor ইত্যাদি স্ট্র্যাটেজি আছে।
ডেমো প্র্যাকটিস: আসল টাকা ঢোকানোর আগে Paper Trading করুন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা
একজন ছেলের কথা বলি। ইউটিউব দেখে সে ট্রেড শুরু করেছিল। প্রথমে কিছু লাভ হলো, সে খুব খুশি। কিন্তু কয়েকদিন পর বড় অঙ্ক ঢুকিয়ে দেয়। তারপর একদিনে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা হারিয়ে সব শেষ।
সে এসে আমাকে বলল-“এখন কী করব?”
আমি বললাম—“ভিডিও দেখে লাভ হবে না। আগে ডেমো ট্রেড করে নিজের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করো। ধৈর্য রাখলে তবেই বুঝতে পারবে।”
কার জন্য উপযুক্ত?
যারা শেয়ার বাজার সম্পর্কে বেসিক জানেন
যারা সাহসী
যাদের শেখার ইচ্ছা আছে
যারা শৃঙ্খলা মেনে চলতে পারেন
নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ
ছোট ক্যাপিটাল দিয়ে শুরু করুন
প্রতিটি ট্রেডের ঝুঁকি হিসাব করুন
কোনো গ্রুপ বা ফেক সিগন্যালে ভরসা করবেন না
শুধুমাত্র সরকারি অনুমোদিত ব্রোকার ব্যবহার করুন
প্রতিদিন কিছু সময় শেখার জন্য ব্যয় করুন
উপসংহার
একটি বৈধ সরকারি স্বীকৃত সিস্টেম। তবে এখানে লাভ যেমন সম্ভব, ক্ষতিও তেমন সম্ভব।
তাই বলা যায়-অপশন ট্রেডিং আসল, কিন্তু সবার জন্য নয়।
যারা শেখে না, নিয়ন্ত্রণে থাকে না-তাদের জন্য এটি শুধু ক্ষতির পথ।